রাত গুলো বড্ড অসহায় লাগে সুবোধের, ঘুম আসতে চায়না , ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা , মা শরীরটা জীর্ণ হাতের শিরা উপশিরা একটা একটা করে গোনা যায়।
তবুও সেই শরীর নিয়ে দিনরাত মেশিন চালিয়ে চলেছে ।জামাকাপড় সেলাই করে দুটো পয়সার জন্য।
মায়ের দিকে তাকিয়ে আরও বেশি কষ্ট পায় সুবোধ।কোনরকমে A. M পাশ করে বসে আছে , একটা চাকরি জোগাড় করতে পারেনি ।
ইচ্ছে হলে পারেনা কিনতে নতুন শার্ট, পূজোয় মাকে বাবাকে দিতে পারেনা নতুন জামাকাপড় । দুটো শার্টেই তার দিনগুলো চালাতে হয়।
রাস্তায় যখন বেরোয় বন্ধু গুলো উপহাস করতে ছাড়েনা , কিরে শার্টটা কি পাল্টাবি না ।সুবোধ কোন কথা না বলে।
মাথা নীচু করে চলে যায় পাশ কাটিয়ে ।ওর কোন বন্ধুও নেই, যারা ছিলো তারাও ওর দিকে এখন ফিরেও তাকায় না , যতই সবাই বলুক পাশে আছি। খারাপ সময়ে ব্যাংও লাথি মেরে চলে যায় ।তার প্রিয় মানুষটাও হাত ছেড়ে চলে গেছে।কলেজ লাইফে তাদের প্রথম দেখা , প্রথম ভালোবাসা ।একটা সময় খুব ভালোবাসতো রঞ্জনা ।কতদিন টিফিনে সুবোধ টিফিন নিয়ে যায়নি , রঞ্জনা নিজের টিফিন ভাগ সামনে দিয়েছে , খাবেনা বললে জোর করে খাইয়ে দিয়েছে, সে সময় সুবোধের বাবা ভালো ছিল, ওদের কোন অভাব ছিলোনা ।
একবছর হলো কলেজ শেষ করেছে , আর এর মধ্যে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।সেদিন থেকে ওদের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।দুমাস আগে রঞ্জনা ছেড়ে চলে গেল ।বলেছিল চাকরি জোটাতে পারোনি ,আমার বাবা তোমার সাথে বিয়ে দেবেনা ।সুবোধ বলেছিলো চাকরিটা কি বড়ো কথা ।দেখো তুমি পাশে থাকো , ঠিক একটা না একটা কাজ জুটিয়ে নেবো ।কিন্তু কোন কথা শোনেনা রঞ্জনা ।তোমার আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ ।সুবোধ সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো ।একমাস ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করতে পারেনি , ইদানিং মনের জোর বড্ড কমে গেছে সুবোধের।জোর বাড়ানোর মানুষটাও আজ পাশে নেই ।
পাড়ার দাদা , কাকা , জ্যাঠাকে কতবার বলছে সুবোধের মা , আমার ছেলেটার একটা চাকরি যোগার করে দিতে পারবে , ছেলেটা A. M পাশ করে বসে আছে।
সবাই বলে দেখছি।কবে যে সে দেখা শেষ হবে কে জানে।
সুবোধ নিজেই অনেক চেষ্টা করে , চাকরির পেপারটায় একটা ভালো কাজের সন্ধান পেলো,একটা আশার আলো যেন দেখতে পেলো , যাক চাকরিটা যদি পেয়ে যায় ভালোই হবে। ওদের গ্যাজুয়েট ছেলে চাই official job. . . ঢুকেই 12000টাকা , ইন্টারভিউ ডেট ওখানে লেখা আছে , পরেরদিনই 1 টার সময় ।পরেরদিন সকাল সকাল উঠে, স্নান করে , রেডি হয়ে ।মাকে প্রনাম করে বেড়িয়ে পড়লো। সুবোধের একটি তোলা শার্ট ছিল, কোথাও গেলে ওটাই পড়ে যায় ।ওই শার্টটা পড়েছিলো। সুবোধের মা রুটি আর আলুর দম রান্না করে ব্যাগের মধ্যে ভরে দিয়েছিলো। ফিরতে দেরি হলে খেয়ে নিস বাবু। মা বলেছিলো, কাগজে দেওয়া ঠিকানায় ঠিক পৌঁছে গেল সুবোধ ।রাস্তার ডানপাশে বড় অফিসটা চোখে পড়লো , Lift করে পাঁচতলা উঠে ,বাঁ দিকের একটি রুমে ইন্টারভিউ নিচ্ছে একটি মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক ।আরও অনেকেই বসে থাকতে দেখে , সুবোধ জিজ্ঞাসা করলো এখানেই কি ইন্টারভিউ নিচ্ছে ।একজন বললো হ্যাঁ , এখানে বসুন এক একজন করে ডেকে নেবে। সবাইকে এক এক করে ডাকার পর ।সুবোধ এর ডাক পড়লো এক সময়।সুবোধ রুমে ডুকেছে , সামনের চেয়ারটায় বসতে বললো , সুবোধ বসলো ।সুবোধের বায়োডাটা দেখার পর ।চশমার ফাঁক দিয়ে ভালো করে দেখলেন একবার সুবোধ কে।তারপর বললেন আচ্ছা তুমি আসতে পারো।স্যার আমার চাকরিটা খুব দরকার ।লোকটি বললেন আগে নিজের পোশাক ঠিক করো তারপর চাকরি।তোমার থেকে হাজার স্মার্ট ছেলে আছে।তুমি আসতে পারো।তবুও স্যার আমার খুব দরকার চাকরিটার, বাবা অসুস্থ ।কোন কথা শোনেনা , তুমি যাবে না দারোয়ান ডাকবো।অগত্যা বেড়িয়ে এলো সুবোধ ।সারাদিন প্লাটফর্মের সিটে বসে থেকে থেকে ।অনেক রাতের দিকে বাড়ি ফিরলো সুবোধ।মা বললেন বাবা চাকরিটা হলো বাবু।কোন কথা বলেনা নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ে বিছানায় । বাবু কিছু খেয়ে ঘুমা , না মা খিদে নেই ।পরদিন বেলা দশটা বেজে যায়, সুবোধ ঘুম থেকে ওঠেনা , এতক্ষণ সুবোধ কখনো ঘুমায় না ।ওর মা দরজা ধাক্কা দিয়েও যখন সাড়া পেলো না ।পাশের বাড়ির লোকজন ডেকে শেষে দড়জা ভেঙে দেখলেন । খাটের উপর সুবোধর নিথর দেহটা পড়ে আছে , মেঝেতে পড়ে আছে ইঁদুর মারা বিষ।
একলা দুপুরে ঝড়া পাতায় বিশ্বজীৎ বণিক ।
******************সমাপ্ত ****************
تعليقات
إرسال تعليق