॥ চিঠি ॥
প্রায় দশ বছর পর বাড়ি ফিরছে সৌম্যজিৎ। মেডিকেল কলেজের পড়া শেষ করে , আমেরিকা যেতে হয় কাজের তাগিদে ।ট্রেনের কামরায় বসেছে দশ মিনিট হয়েছে। কুলিদের চিৎকার, যাত্রীদের কোলাহল তার কানে পৌঁছাছে না , সৌম্যজিৎ ভাবছিল কবিতার কথা , গ্রামের কত খুনসুটির কথা। ছোট থেকে একসাথে বড়ো হয়ে উঠেছে সৌম্যজিৎ ও কবিতা ।ঝড়ের রাতে আম কুড়তে যাওয়া , বর্ষায় মাছ ধরতে যাওয়া ।বর্ষায় ওদের ছোট নদীতে মাছ ধরতে যেত, প্রচুর মাছ পাওয়া যেত ওখানে , মাছের চার বানিয়ে দিতো কবিতা ।যা মাছ পেতো দুজনে ভাগাভাগি করে নিতো।ঘুড়ি ওড়াতে সৌম্যজিৎ খুব পছন্দ করতো, ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কত ঘুড়ি উড়িয়েছে সৌম্যজিৎ ।সুতোর মাঞ্জা দিতে কবিতা সাহায্য করতো।দেখতে দেখতে ওরা দুজনে কখন যেন বড়ো হয়ে উঠেছে, কৈশোর ছেড়ে , যৌবনে পা দিয়েছে । সৌম্যজিৎ তখন কলেজে। কবিতা তখন ক্লাস ইলেভেন, ওদের পাশাপাশি বাড়ি সৌম্যজিৎদের বাড়ির চিলেকোঠা থেকে কবিতাদের বাড়ির জানালাটা পষ্ট দেখা যায়। দুজনের চোখাচোখি হতো যখনই ।মুচকি হেসে কবিতা সরে যেত ।এমনি কিছুদিন কাটলো ।একদিন রাতে বসে সৌম্যজিৎ একখানা চিঠি লিখলো। চিঠিটা ছিল এমন,
প্রিয় কবিতা ,
আমি চিঠি লিখতে পারিনা , চেষ্টা করলাম মাএ, ইদানিং আমার কি হয়েছে জানিনা তোকে একদিন দেখেতে না পেলে মনের মধ্যে কেমন হাঁসফাঁস করে।তুই যখন জানালার পাশে এসে মুচকি হাসিস ।তখন সবকিছু কেমন উলোট পালোট হয়ে যায়।বসন্তের রঙে রঙ্গিন হয়ে উঠি।স্বপ্ন দেখি তোকে নিয়ে, তোর মধ্যে খুঁজে পেয়েছি সুন্দর হৃদয় ।ঝোরা হাওয়ায় গাছের পাতা গুলো যখন ঝরে ঝরে পড়ে , তখন অনেক কিছুই মনে পড়ে যায় ।এই রঙিন পৃথিবীতে একসাথে পথ হাটতে চাই। তুই কি সঙ্গী হবি আমার ।
ইতি-
সৌম্যজিৎ
কলেজ যাওয়ার পথে চিঠিটা দিলো সৌম্যজিৎ ।তার ঠিক দুদিন পরে চিঠি এলো সৌম্যজিৎ কাছে , চিঠিটা হল এই ।
প্রিয় সৌম্যজিৎ,
তোর চিঠি পড়ে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি প্রথমে , বার কয়েক পড়লাম চিঠিটা, সেদিন রাতে ঘুমাতে পারিনি।
আমারও তোকে ভালো লাগে , শক্ত করে ধরতে পারবি তো এই হাত, কখনও ছেড়ে দেবিনা তো।
যদিও তোর উপর আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে ।
আমাদের গ্রামের শ্যাম ইদানিং প্রচন্ড বিরক্ত করে তুই ওকে একটু আচ্ছা করে বকে দিস তো।
ইতি-
কবিতা
এরপর এমন ছোটখাটো চিঠি প্রায় লেখা হয়ে থাকতো ।অনেক গুলো বসন্ত একসাথে পার করেছে ।আমেরিকা যাওয়ার দিন প্রচন্ড কেঁদেছিল মেয়েটা ।কেমন আছে এখন সে। কে জানে।এই কয়েক বছরে কোন যোগাযোগ ছিলোনা ।শুধু এই চিঠি গুলো সাথে ছিল সৌম্যজিৎ এর এই যা ভরসা ।কিছু অর্কিড নিয়েছে কবিতার জন্য। কবিতার বড্ড প্রিয় এই ফুলটি।বলতো বিয়ের সময় এই ফুল দিয়ে সাজানো চাই ।এইসব ভাবছে ,
এমন সময় সামনে বসা এক ভদ্রলোক বললো , আপনি বাঙালি , সৌম্যজিৎ বলল হ্যাঁ , আপনার হাতের আংটিতে রাম লেখা দেখেই বুঝেছিলাম ।ভালোই হলো আপনার সাথে গল্প করা যাবে।আমি আবার বাপু চুপচাপ বসে থাকতে পারিনা ।লোকটি চাকরি থেকে দেশের বাড়ি ফিরছে লোকটি সৌম্যজিৎকে পেয়ে বকবক করে চললো। মশাই কতদিন বাঙালি দেখিনি কল্পনা করতে পারবেন না , আপনাকে দেখে বড্ড শান্তি পেলাম ।সৌম্যজিৎ ও বেশ শান্তি পেল।সে ও তো বাঙালি দেখেনি, লোকটি বললো আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
সৌম্যজিৎ বলল দেশের বাড়ি ।
কি করেন আপনি ?
আমি ডক্টর ।
ওহ্ বলে।বর্তমান পেপারটা এগিয়ে দিয়ে লোকটা একটি খবর পড়তে বললো ।
বড় বড় অক্ষরে হেডলাইন , শিশুর কিডনী বিক্রি করতে গিয়ে গ্রেফতার ডাক্তার ।
খবরটা আগাগোড়া পড়ে সৌম্যজিৎ বললো এই সমস্ত ডাক্তার গুলোর জন্য সমস্ত ডাক্তার জাতির কলঙ্ক লেগে যাচ্ছে ।
দেখুন দেখি ডাক্তারের কাজ মানুষকে সেবা করা ডাক্তার যদি এমন করে তবে কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ ।এখন অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যেতেও ভয় লাগে।সব ডাক্তার যে এমন আমি তা বলছিনা।আরও নানান সব গল্প ভদ্রলোকর গ্রামের গল্প, শুনতে শুনতে বেশ আনন্দেই কাটলো এত বড়ো journey।
দুদিন পর গন্তব্যে পৌঁছে কি যে ভালো লাগছে।সৌম্যজিৎ এর বাবা গাড়ি পাঠিয়ে ছিল ।গাড়িতে করে যখন যাচ্ছিল সৌম্যজিৎ চেনা রাস্তাঘাট কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে , ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলে এটা শালবনির রাস্তা না , হ্যাঁ স্যার ।তিন বছরে কতকিছু বদলে গেছে রাস্তা গুলো সব পাঁকা হয়ে গেছে।আরো কত কাঁচা পাঁকা ঘর হয়েছে
নতুন।বাড়ি ফিরে সৌম্যজিৎ একটি সুন্দরী মেয়ে মায়ের সাথে দেখে একটু অবাক হলো ।মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছিল, হাসিটা খুব চেনা চেনা , তবুও মনে করতে পারলো না কে।বাছা ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করিস নি রোগা হয়ে গেছিস, সৌম্যজিৎ এর মা বলল।
মা প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম, ডাক্তারের জীবন বুঝতেই তো পারছো।আমার সামনে এসেছিস আর নয়, নে সরবতটা খেয়ে নে।মা আমার ব্যাগ থেকে অর্কিড গুলো বের করে ফুলদানিতে রাখো তো , নয় নষ্ট হয়ে যাবে।মেয়েটি আবার মুচকি হেসে বাইরে চলে গেল ।মা এই মেয়েটি কে? কি বলছিস চিনতে পারলি না। কবিতা রে।কবিতা এটা? অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে ।হ্যাঁ কেমন লাগে কবিতাকে তোর, ভালোই কেন মা?
তোর বাবা ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে ।আমার কাজ বাকি আছে ।তুই স্নানটা সেরে ফেল, তারপর খেতে দেবো।মা রান্না ঘরে চলে গেল।সৌম্যজিৎ আনন্দে আটখানা , মনে মনে যেন এটাই চাইছিল সৌম্যজিৎ ।
গ্রীষ্মের দুপুরে ঝরা পাতায়,
সৌম্যজিৎ বলল দেশের বাড়ি ।
কি করেন আপনি ?
আমি ডক্টর ।
ওহ্ বলে।বর্তমান পেপারটা এগিয়ে দিয়ে লোকটা একটি খবর পড়তে বললো ।
বড় বড় অক্ষরে হেডলাইন , শিশুর কিডনী বিক্রি করতে গিয়ে গ্রেফতার ডাক্তার ।
খবরটা আগাগোড়া পড়ে সৌম্যজিৎ বললো এই সমস্ত ডাক্তার গুলোর জন্য সমস্ত ডাক্তার জাতির কলঙ্ক লেগে যাচ্ছে ।
দেখুন দেখি ডাক্তারের কাজ মানুষকে সেবা করা ডাক্তার যদি এমন করে তবে কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ ।এখন অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যেতেও ভয় লাগে।সব ডাক্তার যে এমন আমি তা বলছিনা।আরও নানান সব গল্প ভদ্রলোকর গ্রামের গল্প, শুনতে শুনতে বেশ আনন্দেই কাটলো এত বড়ো journey।
দুদিন পর গন্তব্যে পৌঁছে কি যে ভালো লাগছে।সৌম্যজিৎ এর বাবা গাড়ি পাঠিয়ে ছিল ।গাড়িতে করে যখন যাচ্ছিল সৌম্যজিৎ চেনা রাস্তাঘাট কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে , ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলে এটা শালবনির রাস্তা না , হ্যাঁ স্যার ।তিন বছরে কতকিছু বদলে গেছে রাস্তা গুলো সব পাঁকা হয়ে গেছে।আরো কত কাঁচা পাঁকা ঘর হয়েছে
নতুন।বাড়ি ফিরে সৌম্যজিৎ একটি সুন্দরী মেয়ে মায়ের সাথে দেখে একটু অবাক হলো ।মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছিল, হাসিটা খুব চেনা চেনা , তবুও মনে করতে পারলো না কে।বাছা ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করিস নি রোগা হয়ে গেছিস, সৌম্যজিৎ এর মা বলল।
মা প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম, ডাক্তারের জীবন বুঝতেই তো পারছো।আমার সামনে এসেছিস আর নয়, নে সরবতটা খেয়ে নে।মা আমার ব্যাগ থেকে অর্কিড গুলো বের করে ফুলদানিতে রাখো তো , নয় নষ্ট হয়ে যাবে।মেয়েটি আবার মুচকি হেসে বাইরে চলে গেল ।মা এই মেয়েটি কে? কি বলছিস চিনতে পারলি না। কবিতা রে।কবিতা এটা? অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে ।হ্যাঁ কেমন লাগে কবিতাকে তোর, ভালোই কেন মা?
তোর বাবা ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে ।আমার কাজ বাকি আছে ।তুই স্নানটা সেরে ফেল, তারপর খেতে দেবো।মা রান্না ঘরে চলে গেল।সৌম্যজিৎ আনন্দে আটখানা , মনে মনে যেন এটাই চাইছিল সৌম্যজিৎ ।
গ্রীষ্মের দুপুরে ঝরা পাতায়,