Jan 11, 2019

Aboidho Samparko | অবৈধ সম্পর্ক



অবৈধ সম্পর্ক 

বিশ্বজীৎ বণিক

ক্লাস টেনে সবেমাত্র পিকলু,ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো রমেশ, দুজন দুজনের ভালো লাগা খারাপ লাগা শেয়ার করে নেয় ।সেদিন স্কুলে একটি স্মার্ট ফোন নিয়ে আসে, পিকলুকে দেখিয়ে বলে এটা বাবা বার্থ-ডে তে গিফট করেছে,কতরকমের ভিডিও দেখালো পিকলুকে, গেমস খেলে দেখালো, পিকলুকে ও খেলতে দিল।পিকলুর রীতিমতো লোভ হলো ফোনটার প্রতি। স্কুলের প্রায় সকলের কাছে স্মার্ট ফোন, শুধু ওর কাছেই নেই ।সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পিকলু ভাত খায়না,ওর স্মার্ট ফোন চাই, স্কুলের সকলের কাছে আছে ওর কেন নেই ।ওর মা বোঝায় পিকলুকে ।দেখ তোর বাবা গার্ডের চাকরি করে, সংসার, তোর পড়াশোনা চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে ।ও কারো কোনও কথা শোনেনা, গো- ধরে বসে থাকে ।খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় ।ছেলের এমন পাগলামি দেখে, শেষে ওর বাবার জমানো পয়সা দিয়ে ওকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিতেই হলো।
খুব খুশি পিকলু।পিকলু ফোনটা স্কুলে নিয়ে গেল, রমেশ ওকে ব্যবহার পদ্ধতি শিখিয়ে দিল।টিফিনের পয়সা দিয়ে ফোনে নেট কার্ড ভরা শুরু করে পিকলু।সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিছুদিন পর পিকলু কেমন যেন বদলাতে শুরু করলো, ক্লাসে এলে রমেশের সাথে ঠিকঠাক করে কথা বলে না, পড়াশোনায় মন নেই, কি যেন ভাবে সারাক্ষণ, বাড়ি ফিরে খেলতে যায়না মাঠে, সারাক্ষণ ফোন নিয়ে পরে থাকে ।রমেশ ডাকতে এলে বলে ও যাবেনা ।দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে পিকলুর, দেখলে মনেহয় রাতে ঠিক করে ঘুম হয়না।রমেশ ভাবে কি এমন হোলো পিকলুর, এমন বদলে গেল, জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনা।সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট খুব খারাপ হলো পিকলুর।
দিন যায়, রমেশ বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়ে,পরীক্ষা শেষ কোথাও ঘুরবে দুজন তার উপায় নেই ।তবে কি পিকলুর নতুন কোন বন্ধু জুটলো, তাই রমেশের সাথে কথা বলেনা।তবে পিকলু তো এমন ছেলে নয়, সেই ছোট থেকে রমেশের সাথে বন্ধুত্ব ।একসাথে ওরা কত খেলেছে, ছুটির দিনে দুপুরে রমেশের ছাদের উপর ঘুড়ি উড়িয়েছে, ক্যারাম খেলেছে, ক্রিকেট খেলেছে, পাড়ার ডানপিটে দুটি ছেলে, হঠাৎ এতটা চেঞ্জ হল কেন পিকলুর, রমেশ মনে মনে ঠিক করে ব্যাপারটা কি সেটা জানতেই হবে।পরদিন সকালেই রমেশ পিকলুর বাড়িতে গেল, গেটের সামনে পিকলুর মাকে দেখে,
কাকিমা পিকলু বাড়িতে আছে ।হ্যাঁ ঘরেই আছে দেখ ফোন নিয়ে পড়ে আছে সারাদিন ।খাওয়াদাওয়া করেনা ঠিকমতো, এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি পারলাম না।রমেশ পিকলুর ঘরে ঢুকলো ।খাটের উপর উল্টে শুয়ে ছিল পিকলু ।রমেশকে দেখে তুই কেন এসেছিস? তোকে দেখতে এলাম, কি হয়েছে তোর সত্যি করে বল? কিছুনা তুই যা, পিকলুকে এক ঝাঁকুনি দিয়ে বল কি হয়েছে, আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে তো বলতে পারিস ।চোখে জল চলে এলো পিকলুর, এবার বলতে আরম্ভ করলো।
ফেসবুক একাউন্টে একটি মহিলার সাথে পরিচয় হয় ।মহিলাটি বিবাহিত, ফেসবুকে পিকলু নতুন, রমেশ খুলে দিয়েছিল একাউন্টটা।তারপর বল, মাঝে মাঝে কথা হতো।কিছুদিন যেতে না যেতেই Online থাকলে Messenger না থাকলে ফোনে এ রীতিমতো কল করে, সকাল, রাত, দুপুর কথা বলতো, ওর সাথে কথা বলতে আমারও ভালোই লাগতো ।রাত বারোটা একটা পর্যন্ত ফোনে কথা হতো।আমার সাথে এমন কিছু কথা হতো যা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয় ।দুদিন আগে আমাকে ব্লক করে দিলো।তারপর ফোন করেছিলাম আমি ।বলে আর একবার  ফোন করলে পুলিশে জানাবো ।এখন আমি কি করবো বল কষ্ট হচ্ছে বড় ।
সবটুকু শোনার পর রমেশ বলল, তুই আর ফোন করিস নি তো?
না।
আর কোনদিন করিস না, নম্বরটা এক্ষুনি ডিলিট কর।তুই এখনো অনেক কিছু জানিস না।তুই ফেসবুকে নতুন, আমাকে তো একবার বলতে পারতি।কিছু কিছু মহিলা থাকে যারা নতুন নতুন ছেলেদের সাথে ফ্লার্টিং করতে পছন্দ করে, তারা বোঝেনা যে ছেলেটার কত বড় ক্ষতি করছে, এতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে ।তুই ব্যাচেলর ছেলে তোর মেয়েদের প্রতি এমনি দুর্বলতা থাকাটাই স্বাভাবিক ।চল খেলতে যাবো এইসব তোকে ভুলতে হবে।রমেশের কথা মতো কাজ করে পিকলু।পিকলু ঠিক আগের মতোই হাসিখুশি হয়ে গেল ।
এই ঘটনা যে শুধু ছেলেদের সাথে ঘটে তাই নয়, অনেক মেয়েদের সাথেও ঘটে, কিছু ছেলে আছে যারা মেয়েদের নামে ফেক একাউন্ট খুলে মেয়েদেরকে ফাঁসাতে পারে ।তাই বলছি ফেসবুকে কারো ফাঁদে পা দেবেন না।ফেসবুকে কারো সাথে বন্ধুত্ব করলে বুঝে শুনে করুন ।
**************সমাপ্ত **************