যোগ, ধ্যান, আয়ুর্বেদ ও সাত্ত্বিক জীবনের খোঁজে — দিগন্ত কবিপক্ষ বাংলা ভাষায় সহজ সমাধানের পথ দেখায়। আরও জানুন

প্লাস্টিক আমাদের নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ গ্রাস করছে — প্রতিদিন শরীরে জমছে অদৃশ্য বিষ

প্রতিদিন আমাদের শরীরে ঢুকছে অদৃশ্য প্লাস্টিক, যা কেবল শরীর নয়, ভবিষ্যৎও ধ্বংস করছে। এই লেখায় জানুন কীভাবে প্লাস্টিক আমাদের জীবন, পরিবেশ এবং প্রজন্মক

প্লাস্টিক: মানবসভ্যতার অমর পাপ

তুমি হয়তো জানো না—প্রতি মুহূর্তে তুমি একটা অদৃশ্য বিষ গ্রহণ করছ। তুমি যখন গভীর নিশ্বাস ফেলো, তোমার শিশুটি যখন দুধ খায় প্লাস্টিকের বোতল থেকে, কিংবা যখন গরম ভাতে তুলে নাও মোড়ক বন্দি আচারের এক ফোঁটা, তখন তোমার অজান্তেই প্লাস্টিক ঢুকছে শরীরের প্রতিটি কোষে। এই যে আমরা বসে বসে ভবিষ্যতের চিন্তা করি, এক ভালো পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্নের বুকে ছিদ্র করে রেখেছে এই প্লাস্টিক নামের নিঃশব্দ শত্রু।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু তৈরি করলেন যা সহজে ভাঙে না, জলে গলে না, আগুনেও মিশে না, আর সময় তো যেন তার কাছে নিতান্তই পরিহাস। প্লাস্টিক—একে বলা যায় এক রকম অমর বস্তু, যার বিলুপ্তি মানে অপেক্ষা কমপক্ষে চারশো থেকে পাঁচশো বছর।

মানুষের জীবনকে সহজ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিল প্লাস্টিক। শুরুতে আমরা অবাক হইনি, আনন্দ পেয়েছি। বাহারি বোতল, খেলনা, রান্নার পাত্র, গিফট প্যাক, বাজারের ব্যাগ—সব কিছুর সমাধান হয়ে উঠেছিল এই নতুন উপাদান। কিন্তু আমরা বুঝিনি, এই সাময়িক স্বস্তির পেছনে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা।

সমুদ্রে ভেসে থাকা প্লাস্টিকের আবর্জনা
পৃথিবীর বুক থেকে সমুদ্র পর্যন্ত, প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে নিঃশব্দে।

ভাবো, তোমার ঠাকুমার টুথব্রাশ, বাবার প্রিয় প্লাস্টিকের চশমা কভার—এখনও কোথাও আছে, হয়তো কোন গুহার ভিতরে, কিংবা সমুদ্রের পাড়ে ভাসছে জলের সাথে। আমরা যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি করছি, তার ৮০% সরাসরি মাটিতে ফেলে দিচ্ছি। আর সেই ফেলা প্লাস্টিক অদৃশ্য হচ্ছে না। তারা থেকে যায়—মাটির কোলে, জলধারার বুকে, বাতাসের মাঝে।

প্লাস্টিকের মাঠে বসে থাকা এক বিষণ্ণ শিশু, ভবিষ্যতের বোঝা তার মুখে
প্লাস্টিকের মাঠে বসে থাকা এক বিষণ্ণ শিশু, যার দৃষ্টিতে লুকিয়ে আছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বোঝা।

আমরা, প্লাস্টিক, ও প্রকৃতির কান্না

মাটি একদিন আমাদের গ্রহণ করবে, হাড় মিশে যাবে ধূলিকণায়। কিন্তু প্লাস্টিক? তা থাকবে—অপরিবর্তিত, অমর, নির্লজ্জ। এক শিশুর পর শিশুর পর শিশু পৃথিবীতে আসবে, অথচ তাদের বুকের দুধে থাকবে সেই প্লাস্টিক, যা আমরা ফেলে গিয়েছিলাম। আমরা চলে যাব, কিন্তু প্লাস্টিক থেকে যাবে সাক্ষী হয়ে—আমাদের ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের, অজ্ঞতার, আর পরিবেশ অবহেলার।

প্লাস্টিক বর্জ্যে ঢাকা একটি মাথার খুলি, এক করুণ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
প্লাস্টিক বর্জ্যে ঢাকা একটি মাথার খুলি, এক করুণ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।

বনভূমিতে পাখির বাসা তৈরির চেষ্টা থেমে গেছে কারণ সেখানে শাখা-প্রশাখার বদলে আজ গুঁজে আছে প্লাস্টিকের মোড়ক। গাঙচিলের পেট থেকে বেরোচ্ছে লালচে প্যাকেট, আর সমুদ্রের জলে ভেসে আসছে শিশুর ব্যবহৃত ডায়াপার। নদী যেখানে এক সময় আমাদের শস্য সেচে, প্রাণে ভরিয়ে তুলত, সেই নদী আজ প্লাস্টিকে গলাধঃকরণ করে হাঁপাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা প্রত্যেকে প্রতি সপ্তাহে ১টি ক্রেডিট কার্ডের সমান প্লাস্টিক গিলছি—খাবার, জল, বায়ুর মাধ্যমে। এই ভাবলে কি তোমার শরীর শিউরে ওঠে না? শিশুর কান্না, মায়ের মুখের হাঁসি, বৃদ্ধের ক্লান্ত দৃষ্টি—সবই আজ প্লাস্টিক দ্বারা আক্রান্ত।

প্লাস্টিকের কাহিনি, আমাদের আত্মার অনুরণন

প্লাস্টিক শুধু বস্তু নয়, এক আত্মঘাতী অভ্যাসের নাম। একটি ভুল বিশ্বাস, যে আমরা চাইলেই প্রকৃতিকে বশে আনতে পারি। প্লাস্টিক আমাদের শিখিয়েছে—যে পথ সহজ, সেই পথই বিপদসঙ্কুল হতে পারে। প্রকৃতি আমাদের শত্রু নয়, কিন্তু আমরা তাকে শত্রুতে পরিণত করেছি। আমরা গাছ কেটেছি, নদীর গতিপথ বদলেছি, আর আজ প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে ফেলেছি তার হৃদয়।

প্লাস্টিকে ভরা নদীর ধারে শিশুদের ক্লান্ত ও বিষণ্ণ দৃষ্টি
প্লাস্টিকে ভরা নদীর ধারে শিশুদের ক্লান্ত ও বিষণ্ণ দৃষ্টি, যেখানে জল আর খেলার মাঠে মিলেমিশে গেছে বিষে।

বাঁচার রাস্তা, ফিরে যাওয়া মাটির কোলে

প্রাকৃতিক উপাদানে ফেরা: মাটির হাঁড়ি, কলাপাতা, নারকেলের ছোবড়া, কাপড়ের ব্যাগ—এসব তো আমাদের শিকড়ে ছিল। এগুলোকে ফিরিয়ে আনি।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: বাজার করতে গেলে নিজের ব্যাগ নাও। একবার ব্যবহারযোগ্য জিনিসে না গিয়ে বারবার ব্যবহারযোগ্য পাত্র গ্রহণ করো।
শিক্ষা হোক অস্ত্র: শিশুদের শেখাও প্রকৃতির গুরুত্ব। তারা যেন বুঝতে শেখে কোনটা অস্থায়ী আর কোনটা চিরস্থায়ী।

আরও পড়ুন: আমাদের প্রকৃতি বিষয়ক অন্যান্য লেখা

শেষের শব্দ: হৃদয় দিয়ে ভাবো

একদিন তুমি থাকবে না। তোমার শরীর মিশে যাবে প্রকৃতিতে। কিন্তু তুমি যদি প্লাস্টিক রেখে যাও, তবে তুমি থেকেও থাকবে—একজন অপরাধী হিসেবে, এক অদৃশ্য বিষ ছড়ানো উত্তরাধিকারী হিসেবে। এখনো সময় আছে। একটু থামো, ভাবো, অনুভব করো। নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নাও—তোমার রেখে যাওয়া পৃথিবী যেন হয় পরিষ্কার, নির্মল, প্রকৃতির মতোই সহজ।


আপনার হৃদয়ের কথা শোনাতে চাই। নিচে মন্তব্য করুন, আর নতুন লেখা পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি আপনার ব্রাউজারে বিজ্ঞাপন-ব্লকার ব্যবহার করছেন।
এই ওয়েবসাইট পরিচালনার খরচ বিজ্ঞাপন থেকেই আসে।
অনুরোধ করছি, আপনার বিজ্ঞাপন-ব্লকারে আমাদের সাইটটি whitelist করে দিন।
×