বিটকয়েন কি? কীভাবে কাজ করে ও কেন বিনিয়োগ করবেন – বাংলায় সহজ গাইড
| লেখক: দিগন্ত কবিপক্ষ
আমরা প্রতিদিন যে মুদ্রা ব্যবহার করি — তা কাগজের, ধাতব কিংবা ডিজিটাল, সবই একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিটকয়েন এমন এক মুদ্রা, যা কারো অধীন নয়, কারো হাতে বাঁধা নয়। আজ এই বিটকয়েন নিয়েই আমাদের সহজ বাংলা আড্ডা।
বিটকয়েনের পেছনের গল্প
২০০৮ সালে, বিশ্বজুড়ে যখন আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তখন এক অজানা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যাঁর নাম 'সাতোশি নাকামোতো', তৈরি করেন এই নতুন ডিজিটাল মুদ্রা — বিটকয়েন। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক পদ্ধতি গড়ে তোলা, যেখানে লেনদেনে কোনো মধ্যস্থতাকারী (ব্যাঙ্ক, সরকার) থাকবে না।
.webp)
বিটকয়েন কীভাবে কাজ করে?
বিটকয়েন এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। এর মূল ভিত্তি হলো ব্লকচেইন। আপনি যখন বিটকয়েন পাঠান, সেই তথ্যটি একটি ব্লকে জমা হয় এবং এটি সারা পৃথিবীর কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ একে পরিবর্তন করতে পারে না। প্রতিটি লেনদেন যাচাই হয় গণনা-ভিত্তিক এক প্রক্রিয়ায়, যাকে বলে মাইনিং।
তুলনা করে বলতে গেলে, এটা এমন একটা খাতা — যেটা সবাই মিলে দেখে, সবাই লিখতে পারে, কিন্তু কেউ একা মুছতে পারে না।
বিটকয়েনের গঠন ও ইউনিট
একটি বিটকয়েন ভাগ করা যায় ১০ কোটিতে — ছোট এককটির নাম সাতোশি। এক সাতোশি = ০.০০০০০০০১ বিটকয়েন। এভাবে ভাগ হওয়ার কারণে আপনি খুব কম টাকায়ও বিটকয়েন কিনতে পারেন।
বিটকয়েন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- 🔐 নিরাপত্তা: ব্লকচেইন প্রযুক্তি এটিকে খুবই সুরক্ষিত করে তোলে।
- 🌍 আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ: ব্যাঙ্ক ছাড়াও আপনি সারা বিশ্বে টাকা পাঠাতে পারেন।
- 💸 কম খরচ: ট্রান্সফার ফি অনেক কম, তুলনামূলকভাবে।
- 🕊️ স্বাধীনতা: সরকার বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেই।
কীভাবে বিটকয়েন ব্যবহার করবেন?
প্রথমে দরকার হবে একটি বিটকয়েন ওয়ালেট। এটি একটি ডিজিটাল অ্যাপ বা সফটওয়্যার, যেখানে আপনার বিটকয়েন থাকে।
- ➤ ওয়ালেট তৈরি করুন (যেমন: Trust Wallet, Exodus, Electrum)
- ➤ এক্সচেঞ্জে অ্যাকাউন্ট খুলুন (যেমন: WazirX, CoinDCX, Binance)
- ➤ টাকা জমা দিয়ে বিটকয়েন কিনুন
- ➤ ওয়ালেটে স্থানান্তর করুন
বিটকয়েন বিনিয়োগ: লাভ না লোকসান?
বিটকয়েনের দাম মাঝে মাঝে হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়, আবার পড়েও যায়। অনেকেই এটিকে 'ডিজিটাল সোনা' বলেন। কিন্তু বিনিয়োগের আগে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:
- ⛅ বাজার ওঠানামা অনেক বেশি
- 📉 সরকারি নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে
- 💻 সাইবার হ্যাকিং-এর ঝুঁকি
অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বনাম বিটকয়েন
বিটকয়েন ছিল প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি, কিন্তু এখন এর মতো হাজারো মুদ্রা আছে: ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, ডজকয়েন ইত্যাদি। তবে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরাপত্তা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেক্ষাপটে বিটকয়েন
এই দেশগুলিতে বিটকয়েন বৈধ নয়, তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই এটি ব্যবহার করছেন। ভারতে এর উপর কর ধার্য হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে ভবিষ্যতে এটি বৈধ হতে পারে, যদি যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আসে।
আপনি কি বিটকয়েন ব্যবহার করা শুরু করবেন?
যদি আপনি সচেতনভাবে পড়াশোনা করেন, এবং ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে বিটকয়েন আপনার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবে লোভ নয়, শৃঙ্খলাই হোক পথ।
বিটকয়েন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: আমি কি ১ বিটকয়েন না কিনে ছোট অংশ কিনতে পারি?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি ০.০০০১ বিটকয়েনও কিনতে পারেন।
প্রশ্ন: বিটকয়েন কি বন্ধ হয়ে যেতে পারে?
উত্তর: কারো দ্বারা বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি বিকেন্দ্রীকৃত প্রযুক্তি। তবে কিছু দেশে ব্যবহারে বাধা থাকতে পারে।
আরও পড়ুন
আপনি যদি অর্থনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী হন, আমাদের অর্থনীতি বিভাগে চোখ রাখতে পারেন। সেখানে আমরা নিয়মিত আপডেট দিই।
শেষ কথা
বিটকয়েন একটি বিপ্লবের সূচনা করেছে, যা মুদ্রা ব্যবস্থাকে এক নতুন পথে চালিত করছে। এই পথের গন্তব্য এখনো অজানা, কিন্তু সঠিক জ্ঞান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সতর্কতার মাধ্যমে আপনি এই যাত্রায় অংশ নিতে পারেন।
আপনার সিদ্ধান্ত, আপনার দায়িত্ব — কিন্তু জ্ঞানই হোক আপনার পথপ্রদর্শক।