কোভিশিল্ড ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ ও মস্তিষ্ক স্ট্রোক হতে পারে
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোভিড-19 মহামারির সময় আমরা সবাই কোভিড থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিনের আশ্রয় নিয়েছিলাম । আমরা তিনটি ডোজ এবং একটি সুপার ডোজ নিয়েছিলাম। এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ হিসাবে আমরা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছিলাম। এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ভারতে এবং বিভিন্ন দেশে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
কারা বানিয়েছিলো এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ?
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন একটি কোম্পানির তৈরি যার নাম আস্ট্রা জেনেকা। আস্ট্রা জেনেকা একটি সুইডিশ কোম্পানি এবং জেনকা একটি ব্রিটিশ কোম্পানি। এই দুই কোম্পানির মার্জার হয়ে আস্ট্রা জেনেকা নামে একটি নতুন কোম্পানি গঠিত হয়েছিল।
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দিয়েছে এমন অনেক লোকের বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। তাদের মধ্যে হৃদরোগ, মস্তিষ্ক স্ট্রোক, দৃষ্টি ব্লার, পেট ব্যথা এবং গুরুতর মাথা ব্যথা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক লোক হাসপাতালেও গিয়েছিলেন এই সমস্যাগুলির চিকিৎসার জন্য।
প্রথমে ডাক্তাররা এই সমস্যাগুলিকে ভ্যাকসিনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, এটা ভ্যাকসিনের পরে হওয়া সাধারণ প্রতিক্রিয়া, কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, এই সমস্যাগুলি কিছু লোকের ক্ষেত্রে স্থায়ী ক্ষতি করেছে এবং কিছু মানুষের মৃত্যুও হয়েছে।
টিটিএস রোগ
এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে দেখা দিয়েছে যে সমস্যাগুলি তার নাম হল টিটিএস (Thrombosis with Thrombocytopenia Syndrome)। টিটিএস হল একটি বিরল রোগ যা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে দেখা দিয়েছে কিছু লোকের ক্ষেত্রে। এই রোগে ব্লাড ভেসেলগুলিতে ক্লট তৈরি হয় এবং মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হয়।
টিটিএস রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল - গুরুতর মাথা ব্যথা, দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া , শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলি জেমি স্কট নামের একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছিল, যিনি 2021 সালে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন এবং তার পরে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হয়েছিল। এই ঘটনার পরে তার স্ত্রী আদালতে মামলা করেন।
জেমি স্কটের স্ত্রীর মামলার পরে, আদালতে এই বিষয়ে আরও অনেক মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতে এই মামলাগুলিতে আস্ট্রা জেনেকা কোম্পানি স্বীকার করেছে যে, তাদের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের বিরল ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তারা বলেছে, তাদের ভ্যাকসিনটি সরকারের অনুমোদন পেয়েছিল এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়েছিল, কিন্তু কিছু বিরল ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
আদালতের কার্যক্রম এখনও চলমান। এই কোম্পানির বিরুদ্ধে বড় জরিমানা বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সতর্কতা
আমরা যারা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছি, আমাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ভ্যাকসিনের বিরল ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ক্ষতি এবং হৃদরোগ হতে পারে। যদিও এগুলি খুব বিরল ঘটনা, তবুও আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। যদি আমরা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে থাকি, তাহলে মাথা ব্যথা, দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণগুলির প্রতি সতর্ক থাকা উচিত। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে, তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
সরকার এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে এই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।